সময়ের পরিবর্তন ও ইসলামি পুনর্জাগরণের অনিবার্যতা

আগের যুগে দেখা যেতো গ্রামের লোকেরাই বেশি মসজিদে আসতো। আর শহুরে এলাকায় কিছু মুরুব্বি বয়সের লোক ছাড়া মসজিদগুলো বিরান হয়ে পড়ে থাকতো। শহুরে লোকজনের ভাবসাব এমন ছিল যে, মনে হয় ইসলাম তার মুখাপেক্ষী। তখন শহুরে এলাকার লোকজন দ্বীনহীনতা কে এলিট হওয়ার প্রথম ধাপ মনে করতো। তাদের ধারণা এমন ছিল ধর্মকর্ম করে কখনো এলিট হওয়া যায় না। এলিট হতে হলে প্রথম শর্ত হলো ধর্ম ছেড়ে দিতে হবে।

কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে! গ্রামের মসজিদগুলো বিরান দেখা যায়। আর শহরের মসজিদগুলো জমজমাট দেখা যায়। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও বাস্তবতা এটাই সচেতন মানুষজন দিন দিন ইসলামের ছায়ায় নতুন করে ফেরা শুরু করেছে। আগে রামাদানে দেখা যেত কোন সাহেব একটা রিকশায় উঠেছেন, রিকশা ওয়ালা মুরুব্বি রোজার জন্য ঠিক মতো রিকশা চালাতে পারছে না। তখন ঐ সাহেব তাকে বলছেন, আজকের দিনেও কেউ রোজা রাখে না-কি? রিকশা ওয়ালা কোন উত্তর না দিয়ে একটু হাসি মিলিয়ে আবার সামনে অগ্রসর হয়।

বর্তমান অবস্থা হলো একজন সাহেব রিকশায় উঠে বসেছেন। রিকশা ওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলেন ভাই রোজা রেখেছেন? সে উত্তর দিলো “সারাদিন রিকশা চালাই, রোজা রাখতে কষ্ট হয়”। এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে। শিক্ষিত সমাজের এই ইসলাম প্রীতি, ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার বাসনা আগামী ইসলামি বিপ্লবের দরজা উন্মুক্ত করবে ইনশাআল্লাহ!

মূলত বিগত যুগে শহুরে লোকজন কেন ইসলাম কে এভয়েড করতো তা কি ভেবে দেখেছেন কখনো? আর কি জন্যই বা তখনকার দরিদ্র শ্রেণী ইসলামের উপর অটল ছিল তাও কিন্তু ভাববার বিষয়।

বিগত যুগে শহুরে লোকজন ইসলাম কে এভয়েড করেছে উলামায়ে কেরামের সাথে তাদের দূরত্ব ও ইসলামি জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে। ঢাবিতে পড়া একজন লোক মনে করতো আমি দেশের সর্বোচ্চ ভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট হয়ে ঐ গ্রামের খ্যাত মোল্লাদের কাছে কেন যাবো! ওদের জ্ঞান বলতে কিছু আছে নাকি! ওরা আগের যুগের কেচ্ছা কাহিনি ছাড়া কিছু জানেনা। আবার আলেমদের অবস্থা ছিল এমন তারা নিজেদের কে গুটিয়ে রাখতেন এসব এলিটদের থেকে। মেশার চেষ্টা করতেন না, দাওয়াহ্ দিতেন না।

যেসব আলেম উলামা কিছুটা বয়ান করতেন তাও ছিল কেচ্ছা কাহিনিতে সীমাবদ্ধ। মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ কোন জ্ঞান তাদের নিকট ছিল না। যাদের কাছে ছিল তারা ছিল অপরিচিত গুরাবা। পশ্চিমা দর্শনের বিরাট একটা ভার্সিটি কে জ্ঞান দিয়ে পরাজিত করার মতো ইসলামি জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি উলামা সমাজ তখন ছিল না।

শাহবাগ সেসময় “যুক্তিতর্ক” জ্ঞানে ভরপুর (তাদের জ্ঞান বলতে কিছু অনুমান)। আর ইসলামিষ্টদের নিকট শাহবাগ কে দমন করার জন্য একটা ইলমি যুক্তিতর্কের প্রয়োজন ছিল। যাদের ভাষা ইলমি পরিভাষার পরিবর্তে দাওয়াহ’র ভাষা হবে। আবার রাজনৈতিকভাবে শাহবাগ তাদের জনমত নিয়ে গর্ববোধ করতো। যার বিপরীতে ইসলামি জনমতকে সামনে আনার দরকার ছিল। পুঁজিবাদী দর্শন মুকাবিলা করার জন্য একদল ইসলামি বুদ্ধিজীবী দরকার ছিল যারা ইসলামি দর্শন বর্ণনা করে পুঁজিবাদ ও গনতন্ত্র কে খন্ডন করবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ইচ্ছে হলো তিনি তিনটি ধারা বের করলেন। কলেজ ভার্সিটি থেকে একদল লোক তাদের ভাষায় তাদের যুক্তি খন্ডন করতে আরম্ভ করলো। হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে এদেশের নবী প্রেমিদের শাপলা চত্বরে একত্র করে ওদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন এবং তাদের দম্ভ নিমিষেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। আরেকটা দাঈদের জামাত কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বের করে আনলেন যারা এই গনতন্ত্রের ধোকা ও কুফর কে মানুষের সামনে খুলে খুলে বর্ণনা করতে লাগলো।

সত্যি বলতে কি শাহবাগ আন্দোলন ছিল পরিকল্পিত। আর আমাদের ইসলামিষ্টদের কাজগুলো ছিল অপরিকল্পিত। আমি বলছিনা একেবারে অপরিকল্পিত বরং দৃশ্যমান কোন পরিকল্পনা ছিল না। বরং মহান রব্বুল আলামীন আরশে আজমে পরিকল্পনা করেছেন। তাই আজকে দেখা যায় শাহবাগের পরিকল্পিত আন্দোলন শাপলার অপরিকল্পিত আন্দোলনের নিকট পরাজিত হয়েছে।

শাহবাগের তিনটি পরিকল্পনা-

  • যুক্তি দিয়ে ইসলাম কে খন্ডন করা।
  • জনমত দিয়ে ইসলাম কে দমন করা।
  • ডান্ডিয়ার ভূঁইফোড় বুদ্ধিজীবীদের কে দাড় করানো, যাতে লোকজন আলেমদের নিকট না যায়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা নিজ পরিকল্পনায় এই তিনটি ষড়যন্ত্র কে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। পরিশেষে গত বছরের জুলাইয়ের আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশ কে ডান্ডিয়ার গোলামি থেকে মুক্ত করেছেন।
আজকে যদি বলেন শাহবাগ না শাপলা?
আকাশ বাতাস এক করে সবাই বলবে, শাপলা শাপলা!

কিন্তু নতুন করে যে বিষয়টি মুকাবিলা করতে হবে তা হলো ঢাবি ও তার বুদ্ধিজীবী। আমি কি বলতে চাচ্ছি তা অনেকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। বাস্তবতা হলো আমরা ইসলামিষ্টরা যতদিন ঢাবি কে পরাজিত করতে পারবোনা ততদিন ইসলাম এদেশে কায়েম হবে না।

সামনে আমাদের ঢাবি কে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পরাজিত করতে হবে। এক্ষেত্রে-

  • ঢাবির ইকোনমির পরিবর্তে ইসলামি ইকোনমি ফুল কনসেপ্ট আনতে হবে।
  • ঢাবির রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিবর্তে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যাবস্থার ফুল কনসেপ্ট আনতে হবে।
  • ঢাবির সমাজ বিজ্ঞানের পরিবর্তে ইসলামি সমাজ ব্যাবস্থার ফুল কনসেপ্ট আনতে হবে।
  • ঢাবির আইন শাস্ত্রের পরিবর্তে ইসলামি আইন ব্যাবস্থার ফুল কনসেপ্ট আনতে হবে।

এভাবেই একে একে ঢাবি কে মুকাবিলা করতে হবে।

তারপর আমাদের মুকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিক লিডারদের। জনগণের সামনে পরিস্কার করতে হবে কারা অরিজিনাল লিডার। লিডারশীপে উলামায়ে কেরাম কে এই উম্মাহ্ এমনিতেই গ্রহণ করবে না। নেতৃত্বের যোগ্যতা ফুটিয়ে তুলতে হবে।

এরপর সামরিকভাবেও পরাজিত করতে হবে এই রাষ্ট্র ও এর প্রভু রাষ্ট্র কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *