জুলাই আন্দোলন- মিল্লাতে ইবরাহীম ও বাঙালি জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব

আবু সাইদের শাহাদাতের উপর দাড়িয়ে বয়ান তৈরি করছে মাহফুজ গাং। বিগত জুলাই আন্দোলন যতটুকু হয়েছিল কোটা বাতিল করার জন্য তার চেয়ে বেশি ছিল আওয়ামী জাহিলিয়াত মুক্ত করার জন্য। কিন্তু মাহফুজ গ্যাং হাসিনা কে তাড়িয়ে দিলেও মুক্ত করতে চায়না আওয়ামী জাহিলিয়াত ।

১. আবু সাইদ মিল্লতে ইবরাহীমের চেতনাধারী ছিলেন, মাহফুজ গ্যাংদের মতো আধা শাহবাগি আধা মুসলিম ছিল না। আবু সাইদ মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ব্যাক্ত করেছে আগেই। সেই আবু সাইদের ইচ্ছার বাহিরে গিয়ে তৈরি হচ্ছে আবু সাইদের মূর্তি।

২. জুলাই আন্দোলনের পূর্বে এই আন্দোলনের কোন বয়ান সমন্বয়করা জাতির সামনে সুস্পষ্ট করে বলেনি। আন্দোলন শেষে তারা জাতির সামনে একে একে বস্তাপঁচা বয়ান উপস্থাপন করা শুরু করেছে। আবু সাইদদের মতো অসংখ্য ইসলামপন্থী সাধারণ ছাত্র যেসব বয়ান কে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতো৷

৩. মাহফুজ গ্যাংদের মিল্লাতে ইবরাহীম বিরোধী বয়ান তৈরি করার উদ্দেশ্য হলো এদেশ কে আরেকবার গোলামীর দিকে ঠেলে দেওয়া। এদেশে মিল্লাতে ইবরাহীমি আদর্শের বিপরীতে দাড় করানো হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এদেশের মুসলমানদের মিল্লাতে ইবরাহীমে ফেরার সবচেয়ে বড় বাধা হলো এই বাঙালি জাতিসত্বাবোধ। মাহফুজরা সেই বাঙালি জাতিসত্বা কে চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

৪. আওয়ামী বয়ানে জা-শি কে বলা হতো রাজাকার। নাহিদ তার এক পোস্টে বললো জা-শি ২৪ এ এসে ৭১ এর কাফফারা দিয়েছে। তাদের এখন রাজনীতি করার বৈধতা অর্জন হয়েছে। আওয়ামী আমলের বয়ানের বৈধতা দিলো নাহিদ অথচ জা-শি এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে একটা পোস্ট পর্যন্ত করলো না। একটা রাজনৈতিক দল এতো বোকা হয় কেমনে? জা-শির বর্তমান নেতৃত্ব কি সত্যি গোলাম আজমদের কৃতকর্মের কারনে পশ্চিমের নিকট লজ্জিত! সত্যি কি তারা মনে করে ৭১ এ তারা দেশ বিরোধী শক্তি ছিল?!

৫. জুলাই আন্দোলনে যেহেতু নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কোন বয়ান পেশ করা হয়নি, তাই জনতা এখানে অংশগ্রহণ করেছিলো। এবং জনতা নিজ থেকেই বয়ান তৈরি করে নিয়েছিল। জুলাইয়ে জনতার মূল বয়ান “ছিল শেখ মুজিব ঘোরার ডিম, জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ)। জনতা জুলাই-এ বাঙালি জাতিসত্বার বিলুপ্তি চেয়েছিল। কিন্তু সমন্বয়ক নামের এসব মুনাফিকের দল সেই জাহালাত কে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। যার কারণে বিগত ৫০-৫২ বছর আমরা গোলমি করেছি।

৬. ৭১ এ জা-শি মহৎ কাজ করেছে তা বলছি না। তবে ৭১ এ জা-শি যাদের পক্ষে ছিল তাদের দর্শনে মিল্লাতে ইবরাহীম ছিল যদিও তা ছিল অকার্যকর। ৭১ এ বাঙালি জাতির নিজস্ব কোন দর্শণ ছিল না। ৭১ এ জনগণ জুলুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ৭১ পরবর্তী সময়ে ডারতের ফর্মুলায় তৈরি করা হয় ৭১ এর দর্শন। সেই দর্শন কে এতদিন যারা টিকে রেখেছে তারাই কৌশলে নতুন করে ২৪ এর দর্শন তৈরি করতে চাচ্ছে।

৭. ৭১ এর দর্শন যাদের বিরুদ্ধে তৈরি করা হলো, সেই পাকিস্তান কিন্তু ঠিক জাতিসংঘ সহ বিশ্বের নিকট একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। এমনকি যে বৃটেন আজকে ৭১ এর বয়ান সহ নতুন আওয়ামীলিগের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে তারা-ও তো পাকিস্তানের সাথে ঠিকই সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তাহলে মুসলিম দুটো ভূখণ্ড কে একে অপরের থেকে আলাদা করার পেছনের উদ্দেশ্য কি?

বাঙালি মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক হলো এই বাস্তবতাগুলো নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করা। আমি পাকিস্তানপন্থী হতে বলছি না। পাকিস্তান যাদের গোলাম নতুন বাংলাদেশের নেতারা তাদেরকে-ই মনিব মনে করে। তবে মিল্লাতে ইবরাহীম এর মনিব একজন-ই। তিনি হলেন ” মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা”। আমরা রাজনীতি, ইবাদত, সমাজ ও বিচার বিভাগ সহ সকল ক্ষেত্রে তাকেই মানি।

আমরা নিজেদের কে যেমন এসবের আহাল মনে করি না, তেমনি অন্য কাউলে এসবের আহাল মনে করি না। আমরা বিশ্বাস করি মুসলিম উম্মাহ্ এক জাতি। এখানে বিভক্তি করা জাহালাহ্। আমাদের জাতির স্থানীয় বা আঞ্চলিক কোন পিতা নেই। আমাদের জাতির বৈশ্বিক ও আদি পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। আমাদের জাতির স্থানীয় বা আঞ্চলিক কোন নাম নেই। আমাদের বৈশ্বিক নাম আমরা মুসলমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *