এরদোয়ান তুরস্কে একা হয়ে গেল কেন?

২০০২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত টানা দুই দশকের বেশিদিন হলো এরদোয়ান তুরস্কের দাপটে নেতা। কি এমন ঘটলো হঠাৎ তুরস্কে এরদোয়ান জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পরলো? ২০১৬ সালে যে এরদোয়ানের জন্য জনতা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল সেই এরদোয়ান আজ একা কেন? আমি নিচে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করছি সম্ভবত এটাই তার মূল কারণ!

১. তুরস্কের জনগণ দুভাগে বিভক্ত-

  • ইসলামপন্থী
  • পশ্চিমাপন্থী


ইসলামপন্থী জনতা এতো বেশি ইসলাম বোঝে না যে নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে গিয়ে কোরআন সুন্নাহ অনুসরণ করে লং প্রসেসের পক্রিয়া ও ত্যাগ স্বীকার করবে। বরং তারা ইসলাম কে একটা সুযোগ দিতে চায়, দেখতে চায় ইসলামিষ্টরা ক্ষমতায় এলে জনগণের জন্য কি করতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ইসলামের জ্ঞানে শিক্ষিত সমাজ তুরস্কে বিরল। বিগত দিনে কামাল আতাতুর্কের ইসলাম বিরোধী আইনের কারণে জনগণ জ্ঞানগত দিক থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। তবে ইসলামের আবেগ অর্ধেক বা তারচেয়েও বেশি লোকের মনে ছিল। তাই বামপন্থী রাজনীতির বাহিরে গিয়ে ইসলামের কথা বলা এরদোয়ান আবেগি মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে কিছুটা ইসলামি শিক্ষা, তাহজিব, তাসাদ্দুন পালন করার সুযোগ করে দেয়। এভাবেই আবেগি মুসলিম দলটি বুঝতে পারে অরিজিনাল ইসলাম এরদোয়ান কখনো প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। বরং যারা শরিয়া আইনের পক্ষে কথা বলে, এরদোয়ান তাদের কে বন্দী করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। ওদিকে এরদোয়ান ওয়ালা-বারার তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলের সাথে সামরিক, বানিজ্যিক সবরকম চুক্তি করছে। এমনকি ইসরায়েল যখন গাঁজার অর্ধ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ তখনও এরদোয়ান ইসরায়েল কে গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে। তখন ইসলামপন্থী যে জনগণ একসময় তার জন্য বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে এখন তারা বিকল্প ইসলামিক লিডারের সন্ধান করছে। ইসলামপন্থীদের এই এরদোয়ান বিরোধী মনোভাব কে কাজে লাগিয়ে বামপন্থীরা আশাবাদী হয়ে মাঠে নেমেছে তাদের নেতৃত্ব কে সরকার বানাতে। যখন এরদোয়ান বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, এরদোয়ান যখন আশা করছিল মুসলিম জনতা তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে, তখন মুসলিম জনতা এরদোয়ান কে একজন ধর্মব্যাবসায়ি ছাড়া আর কিচ্ছু মনে করছে না৷ তাই তারা সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। দুই দশকেও এই লোকটি ইসলামের জন্য মূলত কিছুই করেনি।

এরদোয়ান এখন চোখে শর্ষে ফুল দেখছে। এবার সে তার আব্বো মিরিকাট সাহায্য চাচ্ছে কিন্তু মিরিকা তাকে সাহায্য করতে ব্যার্থ হচ্ছে। ওদিকে বামপন্থীদের কে সর্বোচ্চ সাহায্য করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ গোটা ইউরোপ। দেশীয় বামরা তো আছেই। এভাবেই এরদোয়ান ইতিহাসের এক খলনায়কে পরিণত হয়েছে। যে নিজ কওমের সাহায্যে ক্ষমতায় এসে পুরোটা সময় পশ্চিমাদের লেজুড়বৃত্তি করে বেড়িয়েছে। কওম যখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে তখন সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে ইসলামি নামধারী হওয়ায় কট্টরপন্থী বামদের সময় এসেছে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করার।

এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনপন্থী ধোঁকাবাজদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। তুর্কী জনগোষ্ঠী যদিও বুঝতে বুঝতে বিশ বছর অতিবাহিত করে ফেলেছে, কিন্তু বাংলাদেশের তাওহীদি জনতার বিরাট একটা অংশ ইতিমধ্যেই সেই ধোঁকা সম্পর্কে অবগত। কারণ এখানে কামাল আতাতুর্কের শাসন না থাকায় এদেশের আলেমদের বিরাট একটা অংশ শরিয়া নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে আসছে। তাই বলি কি হয়তো নির্বাচনে আপনারা জিতে যাবেন, কিন্ত খুব দ্রুতই জনতা আপনাদের ধোঁকা বুঝতে পেরে মুখ ফিরিয়ে নিলে বামদের সাথে লড়াই করার শক্তি থাকবে তো?

ইতিমধ্যেই শাহবাগ দমনে তাওহীদি জনতার সাহায্য ছাড়া চলে না। জুলাই আন্দোলনে তাওহীদি জনতার সাহায্য ছাড়া টেকা যায় না। কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবেন তাওহীদি জনতার সাহায্য ছাড়া? আজকে তাওহীদি জনতার বিরুদ্ধে মুখে যা আসছে বলছেন, কখনো ভেবেছেন আপনাদের আদর্শ গুরু এরদোয়ানের এই হাল কেন হলো? তুরস্কের তাওহীদি জনতা যদি এরদোয়ানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় তবুও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

২. তুর্কী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ইসলামের মাধ্যমে ইনসাফ আশা করেছিলো, কিন্তু এরদোয়ান তুরস্কে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যার্থ হয়েছে। বরং সে একের পরে এক মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গেছে আর জনগণ ধোঁকা খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে। যেমন সে ইসলাম কায়েম করতে পারেনি তেমনি সে ইনসাফ কায়েম করতে ব্যার্থ হয়েছে।

৩. আর্থিক উন্নয়নের কথা বললেও তুরস্কে অর্থিক সংকট বেড়েই চলছে। ইউরোপের উচ্চ অর্থের বাজারে তুরস্ক পিছিয়ে রয়েছে। এটাও একটা বড় কারণ।

তাহলে তুরস্কের আগামী ভবিষ্যত কি? ইসলামপন্থীরা কি নতুন নেতৃত্ব খুঁজে পেয়েছে? বা ইসলামপন্থী বিরাট জনশক্তি যারা আগে এরদোয়ান কে সমর্থন করেছে তারা বর্তমানে বামধারার কাউকে ক্ষমতায় দেখতে পছন্দ করবে?

১. ইসলামপন্থীদের মূলধারা কখনো নির্বাচন বা ভোট নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা এটাকে কোন যুদ্ধক্ষেত্র মনে করে না। বরং তাদের নিকট এরদোয়ান ও বাম সমান। বরং বামরা ক্ষমতায় থাকলে তাদের জন্য আরও ভালো। কেননা এরদোয়ান কে অনেকে মুসলিম মনে করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাবে না। কিন্তু বামরা থাকলে সেই সম্ভাবনা আর থাকছে না। তাই নির্বাচনে বামরা এলেও তেমন একটা যায়আসেনা।

২. তবুও কিছু লোক এমন রয়েছে যারা এখানো নির্বাচন কে সমাধান মনে করছে তারা হয়তো এরদোয়ানের চেয়ে আরও আদর্শিক কোন নেতা কে তালাশ করছি। হতে পারে সেটা নাজিমুদ্দিন এরবাকানের সাদাত পার্টি।

৩. সিরিয়া বিজিত হওয়ায় মূলধারার ইসলামপন্থীদের সুযোগ এসেছে তরস্কেও সেই বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়ে শরিয়া শাসনের স্বাদ আস্বাদন করার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *