গ্লোবাল রাজনীতি একটা গোলকধাঁধা। এটা বোঝা যেমন সহজ না, তেমনি এই রাজনীতির ময়দানটাও সচ্ছ ও স্থির না। ইচ্ছে করেই গ্লোবাল রাজনীতি কে একটা কঠিন বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। গ্লোবাল রাজনীতির দুইটা বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ক. অর্থনীতি
খ. কূটনীতি
গ্লোবাল রাজনীতির মূল সাবজেক্ট এই দুই বিষয়, বাকিগুলো এদুটো বিষয়ের শাখাপ্রশাখা।
বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত এমন কোন নেতা আসেনি যার নিজস্ব ইন্টারন্যাশনাল কূটনীতিক পলিসি রয়েছে। হ্যা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আঞ্চলিক অর্থনীতি ও কূটনৈতিতে সামান্য কিছু অবদান রাখার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হননি। তবে জিয়া সাহেবেরও কোন কূটনীতিক নিজস্ব পলিসি ছিল না। এমনকি ছিল না কোন ইকোনমিক পলিসিও।
বিগত ৫০-৫২ বছরের বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বাহিরের এক বা একাধিক রাষ্ট্র ও সংস্থার পলিসি বাস্তবায়ন করেছে।
১. আওয়ামিলীগ সবসময় ডান্ডিয়া ও রয়ের রাজনৈতিক পলিসি বাস্তবায়ন করেছে। আওয়ামিলীগ কখনো দেশীয় স্বার্থের তোয়াক্কা করেনি। বরং তার দরকার ছিল ক্ষমতা তাই সে এলাকার পাতি নেতাদের মতো ডান্ডিয়ার পা চেটে হলেও ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছে। বিনিময়ে ডান্ডিয়া যা বলেছে তা-ই করেছে। আপনি যদি বিগত ১৫ বছর ও তার আগের আওয়ামী আমলের ইতিহাস যাচাই করে দেখেন তাহলে দেখবেন আমার এই কথা একদম সত্য। ৭১ এর বয়ান থেকে শুরু করে ভার্সিটি ও স্কুল, কলেজের সিলেবাস সবকিছু সাজিয়ে দিতো ডান্ডিয়া। সেনবাহিনীর জেনারেল থেকে শুরু করে মেজর পর্যন্ত নির্ধারণ করতো ডান্ডিয়া। পুলিশ, র্যাব সহ সকল বাহিনীর সর্বোচ্চ পদধারী থেকে শুরু করে এসপি এমনকি ওসি পর্যন্ত নির্ধারণ করতো ডান্ডিয়া। বাংলাদেশের সচিব থেকে শুরু করে ডিসি ও নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত তারা ঠিক করতো। আপনি কিভাবে বলবেন ডান্ডিয়ার বাহিরে গিয়ে আওয়ামিলীগের নিজস্ব পলিসি ছিল?
এক কথায় বাংলাদেশ কে একটা তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা-ই ছিল ডান্ডিয়ার উদ্দেশ্য। যা সে আওয়ামিলীগ দ্বারা বাস্তবায়ন করতো। বাংলাদেশের জনগণ বিগত সময়ে এই বাস্তবতা না বুঝলেও বর্তমানে তা বোঝে। যারা আওয়ামী রাজনীতি থেকে দেশের অভ্যন্তরীন গঠনব্যবস্থা উন্নয়ন চেয়ে থাকেন তাহলে সে ভুল জিনিস বাছাই করেছেন। সময় এসেছে এই বিষদাঁত কে এদেশ থেকে উৎপাটন করে ডান্ডিয়ায় নিক্ষেপ করার।
২. বিএনপির রাজনীতি যারা দেখেছেন তারা খুব ভালো করেই জানেন। বিএনপি ছিল সর্বদা বৃটিশ ও মিরিকাপন্থী। বিএনপির নিজস্ব কোন রাজনৈতিক পলিসি কখনো ছিল না। বিএনপির নির্বাচনী ইশতিহার দেখলেই তা বোঝা যায়। অবশ্য বিএনপি আওয়ামিলীগের চেয়ে ভালো কিন্তু মিরিকা ও বৃটিশদের স্বার্থই দিনশেষে তারা রক্ষা করে চলে। এমনকি বিএনপির মধ্যে একটা গোষ্ঠী রয়েছে যারা ডান্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
তবে জিয়াউর রহমান আঞ্চলিক নিজস্ব একটা পলিসি গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন তুরস্ক ও মালোশিয়া কে নিয়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক এরকম উদ্যোগ তিনিই প্রথম গ্রহণ করেছিলেন। বিনিময়ে তাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি তে এরকম আর কোন নেতার আগমন ঘটেনি। তাই নিশ্চিত বলা চলে বাংলাদেশের প্রথম নেতা জিয়া যিনি দেশীয় স্বার্থ রক্ষা করার পথ খুলতে চেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ কে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি। তবে যদি বলে বিএনপির কি নিজস্ব কূটনীতিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ছিল? তাহলেও উত্তর আসবে না।
৩. ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারেরও আসলেই কোন নিজস্ব কূটনীতি ও অর্থনীতি নেই। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মতো কোন রাষ্ট্রের তাবেদার নয়। বরং তিনি আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির একটা পার্ট। অর্থাৎ তিনি নিজেই মিরিকান ডেমোক্রেটিক রাজনৈতির একজন সক্রিয় সদস্য। আরও বিস্তারিত বলতে গেলে মিরিকান রাজনীতিতে দুটো ধারা রয়েছে
ক. ডেমোক্র্যাট
খ. রিপাবলিকান
ডেমোক্র্যাটরা মূলত রোমান সম্রাজ্যের আধুনিক ভার্সান। ডেমোক্রেটিক নেতারা তা বারবার স্বীকার করেছে করেছে। যদিও এমন কথা রিপাবলিকান নেতা মিঃ বুশও বলেছেন। তিনি ছাড়াও অনেকেই তা সুস্পষ্ট স্বীকার করেছে। যার কারণে আপনি দেখবেন তারা সর্বদাই ইউরোপ কে প্রটেক্ট করতে চেষ্টা করে। এবং সম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করে। অন্যদিকে রিপাবলিক হলো ইহুদিদের রাজনীতি করে এবং সম্রাজ্য বিস্তারের চেয়ে মিরিকা কে সমৃদ্ধ করা তার উদ্দেশ্য।
আমি কিছু উদাহরণ দেই তাহলেই বুঝে আসবে
১. মিরিকা পররাষ্ট্রনীতি তে ইসরায়েল সবসময় সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে। মিরিকায় ইসরায়েলপন্থী বিলিয়নারদের প্রভাবে। তবে ইউরোপ কিন্তু মিরিকান পররাষ্ট্রের সরাসরি বিষয় নয়। বরং ইউরোপ হলো ডেমোক্র্যাটদের স্বতন্ত্র বিষয়। মিরিকার জনগণ তিনভাবে বিভক্ত।
ক. নিগ্রো ( আফ্রোমিকান)
খ. ইউরোপীয় খৃষ্টান
গ. ইহুদি ( ইসরায়েলপন্থী)
বাকিরা উল্লেখযোগ্য কেউ না। এখনো পর্যন্ত নিগ্রোদের বৃহৎ কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। বরং নিগ্রোরা হয় ইউরোপীয় দল তথা ডেমোক্র্যাটদের সাথে রাজনীতি করে অথবা ইহুদিদের দল রিপাবলিকের সাথে রাজনীতি করে। বিষয়টি মোটামুটি পরিস্কার যে পরিপূর্ণ ইউরোপপন্থী স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করে ডেমোক্র্যাটরা। আর পরিপূর্ণ ইহুদিবাদী স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করে রিপাবলিকানরা।
এখানে মজার বিষয় হলো ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় থাকুক বা রিপাবলিকান ইসরায়েলের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে তারা বাধ্য। কারণ ডীপ স্টেট আবার ইহুদি বলয়ে পূর্ণ। তাই কেউ ডীপ স্টেট কে তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। বরং বলতে পারেন মিরিকান সরকার ডীপ স্টেটের হাতে জিম্মি।
তবে ডেমোক্র্যাটরা ঐসব বিষয়ে ফোকাস করে যা মূলত ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ। যেমন, সমকামী আইন, অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি….
আর রিপাবলিকানরা সবসময় তার মূল ফোকাস থাকে কিভাবে ইসরায়েল কে পূর্ণ সহযোগিতা করা যায়। শতাব্দীর সেরা চুক্তির নামে জেরুজালেম কে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা ও এবার ক্ষমতায় এসে গাঁজা খালি করতে চাওয়া সেই ইহুদিবাদি পলিসির অংশ। এমনকি ইউরোপীয় স্বার্থ ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট কোন বিষয় না। যেকোনো মূল্যে সে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। এতে ইউরোপের সম্মান যেখানে ইচ্ছে চলে যাক তাদের দেখার বিষয় না। সে তার সর্বশক্তি দুটি কাজে ব্যায় করতে চায়।
ক. মিরিকান অভ্যন্তরিন শক্তি বৃদ্ধি
খ. ইসরায়েলের স্বার্থ
আর এদিকে ডেমোক্র্যাটরা তাদের সর্বশক্তি দুটি কাজে ব্যায় করতে চায়।
ক. ইউরোপীয় স্বার্থ
খ. সম্রাজ্যবাদ বিস্তার
এজন্য দেখবেন ডেমোক্র্যাটরা ন্যাটো কে প্রচন্ড গুরুত্ব দিলেও রিপাবলিকানরা ন্যাটো কে পাত্তাও দেয়না। ন্যাটো হলো আধুনিক ক্রুসেড বাহিনী।
ড. ইউনুস কে বোঝাতে গিয়ে এতোকিছু বলতে হলো। ড. ইউনুস হলো মিরিকান ডেমোক্রেটিক বলয়ের একজন সক্রিয় সদস্য। আর এই বলয়ের বর্তমান রাজধানী ফ্র্যান্স যা ড. ইউনুসের সেকেন্ড হোম। এজন্যই বলছি দেশীয় স্বার্থ হাসিল করা ড. ইউনুসের উদ্দেশ্য নয়। ড. ইউনুসের উদ্দেশ্য হলো এদেশ কে পরিপূর্ণ ইউরোপের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা। ড. ইউনুস একটা কথা বলেছিল মিরিকান পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত পরিবর্তন হয়না। ড. ইউনুস কে মিরিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বসিয়েছে তা শেষ হয়ে যায়নি। বা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসলেও উদ্দেশ্য আগেরটা বহাল রয়েছে।
আর এজন্যই স্বাধীনতা দিবসে ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে প্রায় সকল দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা ড. ইউনুস কে স্বাধীনতা শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ইউরোপীয় স্বার্থ উদ্ধার ও আমিরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়োগকৃত ড. ইউনুস কে সকল রাষ্ট্র সম্মান করবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।